বিষয়বস্তুতে চলুন

ইনকা সাম্রাজ্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইনকা সাম্রাজ্য

তাওয়ানতিনসুইয়ু
১৪৩৮–১৫৩৩
ইনকা সাম্রাজ্যের জাতীয় পতাকা
সাপা ইনকার পুনর্গঠিত ব্যানার
ইনকা সাম্রাজ্য।
ইনকা সাম্রাজ্য।
অবস্থাসাম্রাজ্য
রাজধানীকোস্কো (১৪৩৮-১৫৩৩)
প্রচলিত ভাষাকেচুয়া (সরকারি), আইমারা, পুকুইনা, জাকি, মুচিক ইত্যাদি স্থানীয় ভাষা
ধর্ম
ইনকা ধর্ম
সরকারপূর্ণ রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র
সাপা ইনকা 
• ১৪৩৮-১৪৭১
পাচাকুতি (প্রথম)
• ১৫৩২-১৫৩৩
আতাহুয়াল্পা (শেষ)
ঐতিহাসিক যুগপ্রাক-কলম্বীয় যুগ
• ১৫৭০
১৪৩৮
• পাচাকুতি দ্বারা তাওয়ানতিনসুইয়ুর পত্তন
১৪৩৮
১৫২৯-১৫৩২
১৫৩৩
আয়তন
১৪৩৮[]৮,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৩,১০,০০০ বর্গমাইল)
১৫২৭২০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৭,৭০,০০০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা
• ১৪৩৮[]
১,২০,০০,০০০
• ১৫২৭
২,০০,০০,০০০
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
কোস্কো রাজ্য
আইমারা রাজ্যসমূহ
চিমোর রাজ্য
ভাইসরয়েল্টি অফ নিউ কাস্তিল
ভাইসরয়েল্টি অফ নিউ আন্দালুসিয়া

ইনকা সাম্রাজ্য, বা আনুষ্ঠানিক নাম তাওয়ানতিনসুইয়ু (কেচুয়া: Tawantinsuyu, "চতুর্দিকব্যাপী সাম্রাজ্য"), দক্ষিণ আমেরিকার একটি প্রাক কলম্বীয় সাম্রাজ্য ছিল। ধারণা করা হয়, ইনকা সাম্রাজ্যের অধিবাসীদের পূর্বপুরুষগণ আমেরিকার অন্যান্য লোকেদের মতই বেরীয় প্রণালী পার হয়ে এশিয়া থেকে আমেরিকা মহাদেশে পা রেখেছিল। কালক্রমে নানাভাবে বিভক্ত হয়ে এরা আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন করে। স্পেনীয়দের আক্রমণে ইনকা সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

নামকরণ

[সম্পাদনা]

দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর আন্দিজ পর্বতমালায় ১৫ শতকে যে সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল তা ইনকা সাম্রাজ্য নামে পরিচিত। ইনকা শব্দের অর্থ "সূর্য দেবতার সন্তান" (Son of the Sun)। আর কোস্কোর অধিপতিকে (ইনকা সম্রাট) সূর্য দেবতার সন্তান হিসাবে বিবেচনা করা হতো। তাই স্পেনীয়রা সাম্রাজ্যটির নাম দেয় "ইনকা সাম্রাজ্য"। কোনো জাতির নাম থেকে ইনকা শব্দটি আসে নি, তবে কখনো কখনো সমুদয় জনগোষ্ঠীকেও ইনকা বলা হতো। ইনকার রাষ্ট্রীয় ভাষার নাম কেচুয়াভাষায় সাম্রাজ্যটির নাম তাওয়ানতিনসুইউ। এর বাইরেও সাম্রাজ্য জুড়ে অন্তত ২০ টি স্থানীয় ভাষার অস্তিত্ব ছিল।

অবস্থান

[সম্পাদনা]

কোস্কো কেন্দ্রিক গড়ে উঠলেও ইনকা সাম্রাজ্য পরবর্তীকালে সমগ্র পেরুবলিভিয়া, দক্ষিণ ইকুয়েডর, উত্তর আর্জেন্টিনা, ও উত্তর চিলি এর একটি বড় অংশ জুড়ে ছড়িয়ে পরে।.

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ব্যপ্তি

[সম্পাদনা]

আমেরিকার স্থানীয় অধিবাসীদের গড়া সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য হচ্ছে ইনকা। ইনকা সভ্যতার সূচনা হয় দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার দক্ষিণে কুজকো অঞ্চলে। চৌদ্দ শতকের শেষ দিকে এখান থেকে ইনকা সাম্রাজের বিস্তার শুরু হয়। ইনকারা তাদের আবাস ভূমিকে বলত "তাওয়ানতিনসুইয়ু"। এ শব্দটি কেচুয়া ভাষার শব্দ। যার অর্থ চার অংশ। বিশাল আকারের জন্য ইনকা সাম্রাজে ছিল ভৌগোলিক বৈচিত্র্য। কোথাও ছিলো চাষ উপযোগী উপত্যকা, কোথাও পাহাড়ি ভূমি, কোনো অংশ জুড়ে ছিলো সমুদ্রের তটভূমি।

রাজ্য থেকে সাম্রাজ্য

[সম্পাদনা]

ইনকা সাম্রাজের প্রথম যুগের ইতিহাস খুব স্পষ্ট নয়। স্পেনীয়দের লেখায় কিছু ধারণা পাওয়া যায়। কোস্কো অঞ্চলে যাত্রা শুরু হলেও ক্রমে বর্তমান আইয়াকুচো, পেরু ইত্যাদি অঞ্চলের অনেকটা অংশ নিয়ে ইনকাদের বিশাল শক্তিশালী রাজ্য গড়ে উঠেছিল। দশ শতকে এ অঞ্চলগুলো ছোট ছোট সামন্ত অধিপতিদের অধীনে ছিল। প্রথমদিকে ইনকারা প্রতিবেশী ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোর ওপর আধিপত্য বিস্তার করে। এভাবেই তারা বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলে।

সম্রাটদের শাসন

[সম্পাদনা]

অনেকের ধারণা, ইনকা সাম্রাজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মানকো কাপাক। ইনকাদের রাজ্য বিস্তারে সবচেয়ে সফল রাজা ছিলেন পাচাকুতি। স্পেনীয় ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী, পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত ইনকা সাম্রাজের তিন ভাগের দুই ভাগই অধিকার করেছিলেন তিনি। ১৪৭০ সালে ইনকারা সবচেয়ে সম্পদশালী ও শক্তিধর রাজ্য চিমু অধিকার করে। বর্তমান পেরুই হচ্ছে সে যুগের চিমু। বিজয় অভিযান চূরান্তভাবে সম্পন্ন করেছিলেন পাচাকুতির ছেলে। সিংহাসনের এ উওরাধিকারীর নাম ছিল টোপা ইনকা। সিংহাসনে বসার আগেই উওরের সীমান্ত এলাকায় আঘাত হানেন তিনি। এখানেই জন্ম নেয় ইকুয়েডর রাজ্য। তার শাসনকালে ইনকা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় পেরুর দক্ষিণে সমুদ্র তীরাঞ্চল, চিলির উওরাংশ, আর্জেন্টিনার উওর-পশ্চিমাংশ এবং বলিভিয়া- মালভূমির কিছু অংশ। শেষ ইনকা শাসক আটাহুয়ালপা এর পিতা হুয়াইনা কাপাক ১৫২৭ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সাম্রাজ্যের শেষ উওর সীমায় শাসন করেছিলেন।

ইনকা সাম্রাজ্যের শাসকবৃন্দ

[সম্পাদনা]

ইনকা সাম্রাজ্যের সম্রাটদের আনুষ্ঠানিক ভাবে "সাপা" বা "সাপা ইনকা" বলা হতো। কোস্কো রাজ্য এর রাজা পাচাকুতি ইনকা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনিই ছিলেন ইনকাদের প্রথম সাপা। শেষ স্বাধীন সাপা ছিলেন আতাহুয়াল্পা যিনি স্পেনীয় আক্রমণে প্রাণ দেন।

নিম্নে সাপা ইনকাদের বাংলা ও স্পেনীয় ভাষায় নাম, তাদের জন্ম পরিচয়, তাদের মেয়াদকাল ও তাদের সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নোট আকারে দেয়া হলো।

সম্পূর্ণ তালিকার জন্য দেখুন, সাপা ইনকা#সাপা ইনকাদের তালিকা
সাপাদের নাম (বাংলা) সাপাদের নাম (স্পেনীয়) জন্ম পরিচয় মেয়াদকাল নোট
পাচাকুতি Pachacuti ১৪৩৮-১৪৭১ ইনকা সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট
তুপাক ইনকা ইউপাঙ্কি Tupac Inca Yupanqui পাচাকুতির ছেলে ১৪৭১-১৪৯৩
হুয়াইনা কাপাক Huayna Capac তুপাক ইনকা ইউপাঙ্কির ছেলে ১৪৯৫-১৫২৭
হুয়াস্কার Huascar হুয়াইনা কাপাকের ছেলে ১৫২৭-১৫৩২ ১৫৩৩ সালে আতাহুয়াল্পার হাতে প্রাণ হারান
আতাহুয়াল্পা Atahualpa হুয়াইনা কাপাকের ছেলে, হুয়াস্কারের ভাই ১৫৩২-১৫৩৩ ২৬ জুলাই, ১৫৩৩ সালে স্পেনীয়দের হাতে প্রাণ হারান, ইনকা সাম্রাজ্যের শেষ সাপা ইনকা

সাম্রাজ্যের অবসান

[সম্পাদনা]

সাম্রাজ্য যখন খুব বড় হয়ে যায় তখন তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সব সময়েই কঠিন। হুয়াইনা কাপাক এর সময় ইনকাদের গৃৃহযুদ্ধ হয়েছিল। এ যুগে উওরাধিকার নির্বাচনের কোনো নির্দিষ্ট নিয়মছিল না। একারণে সিংহাসনের দাবিদারদের মধ্যে দ্বন্ধ লেগেই থাকত। নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হত। এ দ্বন্ধ- সংঘাতের সুযোগ নিয়েছিলো স্পেনীয়রা১৫৩২ সালে স্পেনীয় বিজেতা ফ্রান্সিসকো পিজাররো ইনকা সাম্রাজ্যে প্রবেশ করেন। স্পেনীয়দের ব্যবহার করা শক্তিশালী বন্দুক ও কামানের সামনে ইনকারা সাধারণ তীর-বল্লম দিয়ে টিকতে পারেনি। তার বাহিনীই ধ্বংস করে দেয় ইনকা সাম্রাজ্য। শেষ সাপা আতাহুয়াল্পাকে পিজারো বাহিনী হত্যা করে।

রাষ্ট্রব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

সম্রাট

[সম্পাদনা]

ইনকা সম্রাটদের আনুষ্ঠানিক ভাবে বলা হতো "সাপা"। সাপাগণ ছিলেন সূর্যদেবতা ইন্তির প্রতিনিধি। তবে এই সাপাদের হাতে কোনো সার্বভৌম ক্ষমতা ছিলো না।

আঞ্চলিক শাসনব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

পুরো ইনকা সাম্রাজ্য জুড়ে ছিল নানা গোত্র আর ভাষার মানুষ। ফলে সাম্রাজের ভেতর ঐক্য গড়ে তোলা কঠিন ছিলো। ইনকাদের মধ্যে ঐক্য গড়ার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ লক্ষে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অভিজাতদের একটি দল কোস্কোতে আসে। তারা জনসাধারণের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। এভাবেই ইনকা সাম্রাজ্যে আঞ্চলিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় এবং একই সঙ্গে একটি অভিজাততন্ত্র কায়েম হয়।

সামরিক ব্যবস্থাপনা

[সম্পাদনা]

ইনকারা সামরিক ভাবে অনেক শক্তিশালী ছিল। দক্ষ সৈন্যবাহিনীর সহায়তায় বিভিন্ন সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তারা বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করে। ইনকা প্রশাসনে সামরিক বাহিনী একই সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বও পালন করতা। অপরাধ দমন করার জন্যও সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এজন্য ইনকারা বিভিন্ন দুর্গ গড়ে তুলে। মূল দুর্গকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু উপদুর্গ গড়ে তুলা হয়। কেচুয়া ভাষায় যাকে বলা হয় "পুকারা" (Pucara)। প্রতিটি পুকারায় ৭-৮ জন সৈনিক দায়িত্বরত থাকতো।

ধর্ম ও সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]

ইনকাদের ধর্মের সাথে প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মের মিল ছিল। ইনকাদের প্রধান দেবতা ছিল সূর্যদেবতা ইন্তি। ইনকা সমাজে রাজা ছিলেন সূর্যদেবতা ইন্তির প্রতিনিধি। ইনকারা মনে করতো ভিরাকোচা নামের এক দেবতা তিতিকাকা হ্রদ এর পানি থেকে উঠে পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার করেন। তাই তিতিকাকা হ্রদ ও এর পানি ছিলো তাদের কাছে পবিত্র।

ইনকারা তিনটি জগতের উপর বিশ্বাস করতো। উচ্চ জগত, মধ্য জগত ও নিম্ন জগত। উচ্চ জগত হলো স্বর্গ, যেখানে পূণ্যবান ও রাজারা মৃত্যুর পর যাবে। সেখানে রয়েছে অসীম সুখ। মধ্য জগত হলো পৃথিবী, যেখানের কর্ম অনুযায়ী মৃত্যর পর তার ফল পাওয়া যাবে। নিম্ন জগত হলো নরক, যেখানে মৃত্যুর পর পাপীরা ফল ভোগ করবে।

ইনকারা দক্ষ নির্মাতা ছিল। এর প্রমাণ তাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা। ইনকারা যাতায়াতের জন্য চাকা ব্যবহার করতো না। পাহাড়ি জাতি হওয়াতে তারা পাহাড় কেটে সিঁড়ি তৈরি করে যাতায়াত করতো।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "The Inca Empire. Created by Katrina Namnama & Kathleen DeGuzman"। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০০৯ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]