বিষয়বস্তুতে চলুন

ভূকম্পমাপক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ভূকম্পমাপক (ইংরেজি: Seismometer ভূত্বকের কম্পন পরিমাপক যন্ত্র। এই যন্ত্রের সাহায্যে প্রধানত ভূমিকম্প, অগ্নুত্পাত বা অন্য য��� কোনও কারণে সংঘটিত ভূত্বকীয় বা ভূগর্ভস্থ কম্পনের তীব্রতা মাপা হয়। এই কম্পন-তীব্রতার তথ্য-উপাত্ত ভূতত্ত্ববিদদেরকে ভূগর্ভের মানচিত্র বানাতে, ভূমিকম্পের উৎস এবং তীব্রতা বিশ্লেষণে সাহায্য করে।

পুরনো যুগে ব্যবহৃত ভূকম্পমাপক যন্ত্রকে সাধারণত ইংরেজিতে "সিজমোগ্রাফ" নামে ডাকা হত। অপরদিকে "সিজমোমিটার" দ্বারা বর্তমান যুগে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক পরিমাপ এবং বিশ্লেষনের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ভূকম্পমাপককে বুঝায়। আর "সিজমোস্কোপ" বা ভূকম্পবীক্ষণ যন্ত্রের শুধুমাত্র ভূমিকম্পের উপস্থিতিরর প্রমাণ পাওয়া যায়।

ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়,এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে।

নামকরণ

[সম্পাদনা]

শব্দটি এসেছে গ্রিক σεισμός, সিস্মোস থেকে যা দ্বারা কম্পঙ্কে বোঝানো হয়। σείω, সিও ক্রিয়াপদ থেকে ঝাঁকুনি দেওয়া অর্থে এটি ব্যবহৃত হয়। এবং এই কম্পন পরিমাপ করার জন্য μέτρον, মেট্রন ব্যবহার প্রথম ব্যবহার করা হয় ১৮৪১ সালে। স্কটিশ পদার্থবিদ জেমস ডেভিড ফোর্বসএর ডিজাইন করা একটি যন্ত্রের বর্ণনা দেওয়ার জন্য ডেভিড মিলনে-হোম এটি প্রথম ব্যবহার করেন।[]

সিসমোগ্রাফ হল আরেকটি গ্রীক শব্দ যা সিস্মোস এবং γράφω, gráphō থেকে প্রাপ্ত। এটি প্রায়শই সিসমোমিটার বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। যদিও এটি আধুনিক সিস্টেমের তুলনায় পুরানো যন্ত্রগুলির ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য, যেখানে স্থলের কম্পনের পরিমাপ এবং রেকর্ডিং একত্রিত হয়েছিল, সেখানে এই ফাংশনগুলি আলাদা করা হয়। উভয় প্রকারই স্থল কম্পনের একটি অবিচ্ছিন্ন পাঠ প্রদান করে। এই অবিচ্ছিন্ন পাঠই তাদের সিসমোস্কোপস থেকে আলাদা করে, যা কেবল ইঙ্গিত করে যে ভূমিকম্প ঘটেছে, ভূমিকম্পটি সম্ভাব্য কত বড় ছিল তার কিছু সহজ পরিমাপ দিয়ে।[]

কোনো কিছুর "কাঁপানো" পরিমাপের ধারণার অর্থ হল "সিসমোগ্রাফ"। শব্দটি আরও কিছু সাধারণ অর্থে ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি মনিটরিং স্টেশন যা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শব্দের পরিবর্তনকে ট্র্যাক করে শৌখিন বেতার যোগাযোগ তরঙ্গকে প্রভাবিত করে একটি আরএফ সিসমোগ্রাফ উপস্থাপন করে[] এবং হেলিওসিজমোলজি, সূর্যের "ভূমিকম্প" সম্পর্কে অধ্যয়ন করে।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় শতাব্দীতে চীনে প্রথম সিসমোমিটার তৈরি করা হয়েছিল। এটি একজন চীনা গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী চাং হং আবিষ্কার করেছিলেন। যন্ত্রের প্রথম পশ্চিমা বর্ণনা পাওয়া যায় ফরাসি পদার্থবিদ এবং যাজক জিন ডি হাউটেফিউইলের কাছ থেকে 1703 সালে। আধুনিক সিসমোমিটার 19 শতকে জেমস স্কট মেকসেনির হাতে বিকশিত হয়েছিল। এটিই ভূমিকম্পের গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত।

অ্যাপোলো লুনার সারফেস এক্সপেরিমেন্ট প্যাকেজের অংশ হিসেবে 1969 সালে চাঁদে সিসমোমিটার স্থাপন করা হয়েছিল। ডিসেম্বর 2018 সালে, ইনসাইট ল্যান্ডার দ্বারা মঙ্গল গ্রহে একটি সিসমোমিটার স্থাপন করা হয়েছে, প্রথমবার কোন সিসমোমিটার অন্য গ্রহের পৃষ্ঠে স্থাপন করা হয়।

চাং হং-এর ভূকম্পবীক্ষণ যন্ত্র

[সম্পাদনা]
চাং হং (Zhang Heng)-এর ভূকম্পবীক্ষণ যন্ত্রের অবিকল প্রতিরূপ হোউফং তিতুং ই (Houfeng Didong Yi)

132 খ্রিস্টাব্দে, চীনের হান রাজবংশের চাং হং প্রথম সিসমোস্কোপ (উপরের সংজ্ঞা অনুসারে) আবিষ্কার করেছিলেন বলে জানা যায়। পরবর্তী হান রাজবংশের ইতিহাস থেকে আমাদের কাছে যে বর্ণনা রয়েছে, তাতে বলা হয়েছে যে এটি একটি বড় ব্রোঞ্জের পাত্র ছিল, যার ব্যাস প্রায় 2 মিটার; শীর্ষের চারপাশে আটটি পয়েন্টে ব্রোঞ্জ বল ধরে ড্রাগনের মাথা ছিল । যখন একটি ভূমিকম্প হত, তখন ড্রাগনের একটি মুখ খুলে তার বলটি গোড়ায় একটি ব্রোঞ্জএর তৈরি ব্যাঙ এর মুখের মধ্যে পরত, শব্দ করে এবং অনুমিতভাবে ভূমিকম্পের দিকটি দেখাত।

প্রাচীন উদাহরণ

[সম্পাদনা]

প্রাচীন নকশা

[সম্পাদনা]

মূল কার্যপদ্ধতি

[সম্পাদনা]

আধুনিক যন্ত্রাদি

[সম্পাদনা]
একটি গতিমাপক (Kinemetrics) ভূকম্পবীক্ষণ যন্ত্র, যেটি অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (United States Department of the Interior) ব্যবহার করত।

টেলি-সিসমোমিটার

[সম্পাদনা]
সমুদ্র-তলে ব্যবহারোপযোগী নিচু-তরঙ্গের ত্রিমুখী ভূকম্পমাপক (ছবিতে মূল আবরণ সরানো)। এই আদলটি Güralp Systems Ltd-এর বানানো একটি CMG-40TOBS, Monterey Accelerated Research System-এর অংশ

শক্তিশালী-কম্পন ভূকম্পমাপক

[সম্পাদনা]

আধুনিক উপাত্ত সংগ্রহ পদ্ধতি

[সম্পাদনা]

ভূকম্পমাপকের আন্ত-সংযোগ

[সম্পাদনা]

আরো দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Ben-Menahem, A. (২০০৯)। Historical Encyclopedia of Natural and Mathematical Sciences। Springer। পৃষ্ঠা ২৬৫৭। আইএসবিএন 9783540688310। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগষ্ট ২০১২ 
  2. Richter, C.F. (১৯৫৮)। Elementary Seismology। স্যান ফ্রান্সিস্কো: ডাবলু .এইচ. ফ্রিম্যান। 
  3. "The RF Seismograph"www.nsarc.ca। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৮ 
  4. "The Singing Sun"solar-center.stanford.edu। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]