বিষয়বস্তুতে চলুন

ই পি চেলিশেভ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ই পি চেলিশেভ
Евгений Петрович Челышев
জন্ম
Евгений Петрович Челышев

(১৯২১-১০-২৭)২৭ অক্টোবর ১৯২১
মৃত্যু১৩ জুলাই ২০২০(2020-07-13) (বয়স ৯৮)
জাতীয়তারাশিয়ান
পেশাভারততত্ত্ববিদ শিক্ষাবিদ
পুরস্কারপদ্মভূষণ (২০০২)
সাহিত্য অকাডেমি ফেলোশিপ (২০০৪)

ই পি চেলিশেভ পুরো নাম ইউজিন পেট্রোভিচ চেলিশেভ (রুশ: Евгений Петрович Челышев) (২৭ অক্টোবর ১৯২১ - ১৩ জুলাই ২০২০ [১] ) ছিলেন সোভিয়েত রাশিয়ার একজন অগ্রগণ্য ভারততত্ত্ববিদ, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। [২][৩] তিনি ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত রাশিয়ার সায়েন্স একাডেমির পূর্ণ-সময়ের সদস্য ছিলেন এবং তিনি দীর্ঘদিন (১৯৮৮-২০০২) মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস্-এ ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্যের বিভাগীয় প্রধানের পদ অলংকৃত করেন। রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসের প্রেসিডিয়াম সদস্যও ছিলেন তিনি। স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত অধ্যাপক চেলিশেভ ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে সোভিয়েত রাশিয়ায় বিবেকানন্দ চর্চা ও বিবেকানন্দ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। [৪] ২০০২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার সাহিত্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য দেশের সর্বোচ্চ তৃতীয় পুরস্কার পদ্মভূষণ প্রদান করে।

জীবনী[সম্পাদনা]

চেলিশেভ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ অক্টোবর মস্কোর একটি বণিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে হাই স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর, তিনি মস্কো ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়াশোনা শুরু করেন। একজন নবাগত হিসাবে তাকে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে হয়েছিল এবং ওরেল মিলিটারি জেলার মিলিটারি টাউন সেসচায় ফ্লাইট স্কুলে যান। [১]

১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে লাল ফৌজ তথা রেড আর্মির ইস্টার্ন ডিভিশনের,  মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে স্নাতক হন এবং স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভাষাবিজ্ঞানে গবেষণা করে বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি ক্যান্ডিডেট অব সায়েন্সেস অর্জন করেন। তার গবেষণার প্রধান বিষয় ছিল: সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন, তুলনামূলক সাহিত্য, ভারতীয় দর্শনবিদ্যা। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই ইনস্টিটিউটের ভারতীয় ভাষা বিভাগের প্রধান ছিলেন। [১]

লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদ হতে ছাড়া পাওয়ার পর, চেলিশেভ রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসের ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ ইনস্টিটিউট-এ তিরিশ বছরেরও বেশি সময়  কাজ করেন। সেখানে তিনি ভারতীয় দর্শনবিদ্যা বিভাগের প্রধান ছিলেন। [৫] একই সময়ে, তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ,মস্কো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক রাষ্ট্রীয় উচ্চশিক্ষায়তনের ভারতীয় ভাষা বিভাগের পরিচালক (১৯৫৬-১৯৭৫) হন।[১] ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে, তিনি ভারতীয় সাহিত্যের উপর গবেষণাপত্র রচনা করে ডক্টর অফ সায়েন্সেস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে চেলিশেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর সংশ্লিষ্ট সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে  সোভিয়েত ইউনিয়নের একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর পূর্ণ-সময়ের সদস্য নির্বাচিত হন এবং এক বছর পরে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের একাডেমি অফ সায়েন্সেসের সাহিত্য ও ভাষা বিভাগের একাডেমিশিয়ান-সচিব নির্বাচিত হন এবং রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসের প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। [১]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

ড. চেলিশেভ ১৯৪৪ ও ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে সেনাবাহিনীর তথা লাল ফৌজের  দুটি অর্ডার অফ দ্য রেড স্টার, ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে অর্ডার অফ দ্য প্যাট্রিয়টিক ওয়ার II ডিগ্রি, ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে অর্ডার "ফর মেরিট টু দ্য ফাদারল্যান্ড" IV ডিগ্রি, ২০���৭ খ্রিস্টাব্দে   III ডিগ্রি, ২০২০ খ্রিস্টাব্দে II ডিগ্রিতে পুরস্কৃত হন। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার রাইটার্স ইউনিয়নের সদস্য হিসাবঃ অর্ডার অফ অনার লাভ করেন। [৬]

ভারত সরকার ২০০২ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ই পি চেলিশেভ-কে  ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার, পদ্মভূষণ  প্রদান করে [৭] ২০০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম রাশিয়ান হিসাবে ভারত সরকারের সাহিত্য অকাদেমি ফেলোশিপ লাভ করেন।[৮]

চেলিশেভ তিরিশ বছর রাশিয়ান রাইটার্স ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। রাশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি আলেকজান্ডার পুশকিনের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি ও পরিচালনার জন্য, "পুশকিন জুবিলি কমিটির" সদস্য হিসাবে, তিনি শিক্ষাবিদদের  বৃহৎ গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সফলতার জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি তাকে মেডেল অফ পুশকিন প্রদান করেন।  [১]

অন্যান্য[সম্পাদনা]

অধ্যাপক চেলিশেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের রাইটার্স ইউনিয়নের সদস্য, সোভিয়েত শান্তি কমিটির সভ্য এবং সোভিয়েত- ভারত মৈত্রী পরিষদের সহ-সভাপতি, ইন্ডিয়ান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির ব্যুরোর সদস্য এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য ছিলেন। [৪]

অধ্যাপক চেলিশেভ স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম শতবার্ষিকী বর্ষে কলকাতা থেকে প্রকাশিত "স্বামী বিবেকানন্দ সেন্টিনারি মেমোরিয়াল ভল্যুমে" স্বামীজি সম্পর্কে তার অসাধারণ বিশ্লেষণাত্মক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। [৪]

বিবেকানন্দ-গবেষণা ও  বিবেকানন্দ-চর্চা[সম্পাদনা]

অধ্যাপক চেলিশেভ ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত । [৯] তিনিই রাশিয়ায় বিবেকানন্দ-চর্চা ও  বিবেকানন্দ-গবেষণা প্রসারের কাজে আজীবন যুক্ত ছিলেন। 'কমিটি ফর কমপ্রিহেনসিভ স্টাডি অব রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ মুভমেন্ট' এর তিনি অন্যতম সহ-সভাপতিও ছিলেন। [৪]

তিনি বিবেকানন্দের আদর্শ, রচনা সম্পর্কে বলেছিলেন-

সোভিয়েত রাশিয়ায় আমার মতো বহু মানুষ আছেন যারা বিবেকানন্দকে ভালবাসেন, বিবেকানন্দের লেখা ভালবাসেন। কত সহজ অথচ কত বলিষ্ঠ তার লেখা। আর মানুষের প্রতি কী গভীর দরদ। নব্বই  বছরের পুরনো হলেও তার লেখা আজও সমান তেজোদীপ্ত, সমানভাবে প্রেরণাপ্রদ। বিবেকানন্দ সম্পর্কে আরও বেশী করে জানার আগ্রহ এবং কৌতুহল আমার দেশবাসীর মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে। আমরা মনে করি বিবেকানন্দের চিন্তা , তার আদর্শ, তার রচনা শুধু ভারতবর্ষের নয়, সমগ্র বিশ্বের সম্পদ।

স্বামী বিবেকানন্দের রচনা পাঠে বিবেকানন্দ সম্পর্কে  চেলিশেভের অনুভব ছিল-

বিবেকানন্দের রচনাবলী আমি খুব ভালভাবে পড়েছি এবং তার উপর পড়েছি তাঁর কয়েকখানা প্রামাণিক জীবনী। তার ভিত্তিতে আমি জোর গলায় বলতে পারি যে, বিবেকানন্দকে যদি শুধুমাত্র একজন তথাকথিত ধর্মীয় প্রচারক হিসেবেই দেখা হয়, তাহলে তা হবে একটা বিরাট ভ্রান্তি। সাধারণ অর্থে একজন ধর্মসম্প্রদায়ের নেতা বলতে যা বোঝায়, বিবেকানন্দ কিন্ত তা ছিলেন না। তিনি ছিলেন তার চেয়ে অনেক বড়, অনেক ব্যাপক ছিল তার চিন্তা ও কর্মের পরিধি। তিনি ছিলেন শান্তি, সমন্বয় এবং বিশ্বভ্রাতৃত্বের মহান 'প্রফেট'। তিনি ছিলেন মৌলিক ভাবনাসম্পন্ন একজন চিন্তানায়ক, স্বচ্ছ-দৃষ্টিসম্পন্ন একজন উদার মানবপ্রেমী। ধর্মীয় সম্প্রদায়ের গোঁড়ামী বা সংকীর্ণতা তাঁর মধ্যে ছিল না। তিনি ছিলেন অসাধারণ এক দেশপ্রেমিক, এক বরেণ্য গণতন্ত্রপ্রেমী এবং এক মহান মানবতাবাদী।

সোভিয়েত মানুষের উপর স্বামীজির প্রভাব ও উপলব্ধি চেলিশেভের রচনায় যেমন বিধৃত হয়েছে-

সোভিয়েতের মানুষ মনে করেন যে, স্বামীজি ও শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী বস্তুত অভিন্ন; বিধ্বংসী পারমাণবিক যুদ্ধের গ্রাসাতঙ্কে বিপন্ন মানব-সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের বাণী একান্তই অপরিহার্য। আমরা বিশ্বাস করি যে, একমাত্র তাঁদের বাণীই বর্তমানের আতঙ্কপীড়িত বিশ্বে শান্তি, সমন্বয় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ায় সক্ষম। তাঁরা সাধারণ ধর্মনেতা মাত্রই নন — আরও অনেক বেশী গরীয়ান। শান্তি, সমন্বয় ও সৌভ্রাত্রের মহান প্রবর্তক পুরুষ তাঁরা। অতীতের ভারতে ও বৃহত্তর বিশ্বে তাঁদের বাণীর কালোপযোগিতা যেমন ছিল তেমনই সাম্প্রতিক ভারতের পরিস্থিতি এবং সমকালীন বিশ্ব-পরিপ্রেক্ষিতেও ততোধিক তার প্রয়োজন। সেই কারণেই বহু সোভিয়েত গবেষক ও চিন্তাশীল ব্যক্তি ইদানীং শ্রীরামকৃষ্ণ—বিশেষ করে স্বামী বিবেকানন্দ বিষয়ক চর্চায় আত্মনিয়োগ করছেন।

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • মডার্ণ হিন্দি পোয়েট্রি. (Современная поэзия хинди.) মস্কো, ১৯৬৫;
  • কনটেমপোরারি ইন্ডিয়ান লিটারেচার. (Современная индийская литература.) মস্কো, ১৯৮১;
  • সুমিত্রানন্দন পন্থ: দ্য সিঙ্গার অফ দ্য হিমালয়াজ" (Сумитранандан Пант. Певец Гималаев.) মস্কো, ১৯৮৫;
  • ইন্ডিয়ান লিটারেচার ইয়স্টারডে অ্যান্ড টু'ডে. (Индийская литература вчера и сегодня.) মস্কো, ১৯৮৮;
  • সিলেক্টেড ওয়ার্কস্ ইন থ্রি ভল্যুমস্ (Избранные труды. В 3 томах.) মস্কো, ২০০২;
  • রাশিয়ান ইমিগ্রেশন: ১৯২০-৩০. হিস্ট্রি অ্যান্ড মডার্নিটি (Российская эмиграция: 1920-30-е годы. История и современность.) মস্কো, ২০০২.
  • উজকয়ে এস্টেট অ্যান্ড ভ্লাদিমি সলোভিভ এম., ২০১২. (Усадьба Узкое и Владимир Соловьёв; এম. ইউ. কোরোবকোর সহ-লেখক).

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Челышев Евгений Петрович" [Chelyshev Evgeniy Petrovich] (রুশ ভাষায়)। Russian Academy of Sciences 
  2. "भारतीय साहित्य में योगदान के लिए ई.पी. चेलीशेव के 90वें वर्षगांठ पर उनकी सराहना"। Pravasi Duniya। ১৫ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১৩ 
  3. Vivekananda, Swami (১৯৯৬)। My India : the India eternal (1st সংস্করণ)। Calcutta: Ramakrishna Mission Institute of Culture। পৃষ্ঠা 234। আইএসবিএন 81-85843-51-1 
  4. বিবেকানন্দ, স্বামী (১৯৮৬)। আমার ভারত অমর ভারতরামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার, কলকাতা। পৃষ্ঠা ১৯৪। আইএসবিএন 978-81-8584-316-2 
  5. "Report of 9th General Conference, UNESCO" (পিডিএফ)। UNESCO। ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭। 
  6. "Челышев Евгений Петрович. Академик Российской академии наук"। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১৩ 
  7. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫ 
  8. "Academician Y.P. Chelyshev 90th birth anniversary celebrations"Russian Embassy, India 
  9. Santwana Dasgupta (১৯৯১)। Vivekananda, the Prophet of Human Emancipation: A Study on the Social Philosophy of Swami Vivekananda। Bijaya Dasgupta। পৃষ্ঠা 352।