ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল
ব্রিটিশ ভারতে যে কয়েকট��� বেসরকারী চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, তার মধ্যে ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল অন্যতম।
প্রতিষ্ঠা[সম্পাদনা]
![](http://178.128.105.246/host-http-upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/12/Radha_Gobinda_Kar.jpg/255px-Radha_Gobinda_Kar.jpg)
ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সম্পাদক
১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাজ্যর এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করে ডঃ রাধাগোবিন্দ কর ভারতে ফিরে আসলে কলিকাতায় একটি জাতীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তৈরীর উদ্দেশ্যে তিনি একটি বৈঠক আহ্বান করেন । ঐ সালের ১৮ অক্টোবর ডঃ মহেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, ডঃ অক্ষয় কুমার দত্ত, ডঃ বিপিন বিহারী মৈত্র, ডঃ এম. এল. দে, ডঃ বি. জি ব্যানার্জী এবং ডঃ কুন্দন ভট্টাচার্য্যের মত কলিকাতার বিখ্যাত চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে ঐ বৈঠকে ব্রিটিশ শাসকদের অধীনে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথক একটি মেডিক্যাল স্কুল স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।[১] এই সিদ্ধান্ত থেকে ১৬১, বৈঠকখানা বাজার রোডে ক্যালকাটা স্কুল অব মেডিসিন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শীঘ্রই ১১৭, বৌবাজার স্ট্রীটে স্থানান্তরিত হয়। ডঃ জগবন্ধু বসু এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম সভাপতি এবং ডঃ রাধাগোবিন্দ কর প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হন। পঠনপাঠনের জন্য সরকারী ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলের চিকিৎসা পাঠ্যক্রম গৃহীত হয়। বাংলা ভাষাকে শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে স্থির করা হয়। এবং পঠন পাঠনের সময়কাল নির্ধারিত হয় ৩ বছর। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে এই স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল রাখা হয় এবং ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ডঃ লাল মাধব মুখার্জী ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং ডঃ রাধাগোবিন্দ কর সম্পাদক নির্বাচিত হন।[২]
প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো[সম্পাদনা]
স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে আট হাজার টাকা খরচ করে ধীরে ধীরে বক্তৃতাগৃহ, রোগবিদ্যা ও ভেষজের মিউজিয়াম, পরীক্ষাগার, শবব্যবচ্ছেদের ঘর, গ্রন্থাগার এবং বহির্বিভাগীয় অনাবাসিক চিকিৎসা বিভাগ তৈরী করে। শবব্যবচ্ছেদের জন্য মৃতদেহ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং মেয়ো নেটিভ হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত হত।[২] ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এই স্কুল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজের নিকটে ২২৮, আপার সার্কুলার রোডে স্থানান্তরিত করা হয়।
অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা[সম্পাদনা]
১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে শ্যামবাজার এবং বেলগাছিয়ার মধ্যবর্তী একটি স্থানের দশ বিঘা জমি ২৫,০০০ টাকায় ক্রয় করা হয়। প্রথমে এখানে ৭০,০০০ টাকা খরচ করে ৩০ শয্যার অন্তর্বিভাগ বিশিষ্ট একটি একতলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়। ব্যয়ের ১৫,০০০ টাকা প্রিন্স অ্যালবার্ট ভিক্টর এর ভারতদর্শনের স্মৃতিরক্ষা তহবিল থেকে পাওয়া যায় এবং ভবনের নাম তার নামে রাখা হয়। ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন বাংলার লেফটেনেন্ট গভর্নর স্যার জন ঊডবার্ণ দ্বারভাঙ্গার মহারাজা রামেশ্বর সিং বাহাদুর, রায় বাহাদুর বৈকুন্ঠ বসু রায়, ডঃ প্রিয়লাল দে, ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার, রাজা শিউবক্স বোগলে, রাজা প্যারীমোহন মুখার্জী প্রভৃতি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন[২] এবং ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। [৩]
মেডিক্যাল শিক্ষা[সম্পাদনা]
চিকিৎসা বিজ্ঞান পঠনপাঠনের জন্য সরকারী ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলের চিকিৎসা পাঠ্যক্রম গৃহীত হয়। বাংলা ভাষাকে শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে স্থির করা হয়ব এবং পঠন পাঠনের সময়কাল নির্ধারিত হয় ৩ বছর। প্রথমে সামান্য কয়েকজন শিক্ষক এবং মাত্র আটজন ছাত্র নিয়ে স্কুলের পঠন পাঠন শুরু হলেও ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ছাত্রসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬০ জন। সরকারের অনুমতি না থাকায় প্রথম দিকে এখানে শবব্যবচ্ছেদের ছিল না। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সরকারের অনুমতি নিয়ে এখানে শবব্যবচ্ছেদের ব্যবস্থা হয়। প্রতিষ্ঠানের প্রথম দিকের বছরে আর্থিক অভাবের জন্য স্কুল সংলগ্ন হাসপাতাল স্থাপিত না হও���়ায় ছাত্ররা মেয়ো নেটিভ হাসপাতালে নিদানিক শিক্ষা এবং সুকিয়া স্ট্রিট ও চিত্পুরের অনাবাসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে ক্লিনিক্যাল শিক্ষা গ্রহণ করত। অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠার পর ছাত্ররা এখানেই যাবতীয় শিক্ষালাভ করার সুযোগ পায়।[২]
পরিণতি[সম্পাদনা]
১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল এবং অপর একটি বেসরকারী চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল একত্রীভূত হয়ে দ্য ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল তৈরী হয়, যা বর্তমানে রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নামে পরিচিত।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ওয়েবসাইট ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে,রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইতিহাস
- ↑ ক খ গ ঘ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস - উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব - বিনয় ভুষণ রায়, প্রথম সম্পাদনা, আইএসবিএন ৮১-৮৯৬৪৬-০০-৪ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম
- ↑ রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ১৯৮২-১৯৮৭ খৃষ্টাব্দে পাঠরত ছাত্রদের ওয়েবসাইট ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ জুলাই ২০১৪ তারিখে,রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইতিহাস